মেরিন ফিশারিজ একাডেমি, চট্টগ্রামের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি ও সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে উপস্থাপনা
১। ভূমিকা। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (BFDC) এর অধীনে পরিচালিত গভীর সমুদ্রগামী মৎস্য জাহাজের জন্য প্রশিক্ষিত নেভিগেটর, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট তৈরীই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। ঐ সময়ে BFDC এর অধীনে গভীর সমুদ্রগামী ২৭টি মৎস্য জাহাজ এবং বেসরকারী মালিকানায় অল্প কিছু সংখ্যক কাঠের তৈরী ট্রলার নিবন্ধিত ছিল। একাডেমি হতে প্রশিক্ষণের অব্যাহতির পরই অধিকাংশ ক্যাডেটদের এ সময়ে সরকারী মৎস্য জাহাজে চাকুরী নিশ্চিত ছিল। শুরুতে একাডেমিতে বছরে মাত্র ৩০ জন ক্যাডেট ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ এ।
২। একাডেমির ভৌগোলিক অবস্থান। চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলি নদীর মোহনা হতে ১০ নটিক্যাল মাইল ভিতরে চট্টগ্রাম সদর ঘাটের অপর প্রান্তে মৎস্য বন্দর, ইছানগর এলাকায় ১০.৩৩ একর জায়গা নিয়ে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি অবস্থিত।
৩। একাডেমি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।
ক। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বঙ্গোপসাগরের চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত জাহাজ এবং মাইন অপসারণপূর্বক চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য তদানিন্তন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাশিয়ান বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়েছিল। উক্ত বিশেষজ্ঞগণ নির্ধারিত কাজ করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে বিপুল মৎস্য সম্পদের সন্ধান পান এবং তা আহরণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তদানিন্তন রাশিয়ান সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদ আহরণের নিমিত্তে অফিসার, নাবিক এবং বিশেষজ্ঞসহ ১০টি ট্রলার প্রদান করেন। বাংলাদেশ সরকার উক্ত ট্রলারসমূহ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের হাতে ন্যস্ত করেন।
খ। ভবিষ্যতে যাতে দেশীয় প্রশিক্ষিত জনবল দ্বারা উক্ত ট্রলারসমূহ পরিচালনা করা যায় এবং আরও ব্যাপক হারে বঙ্গোপসাগর হতে মৎস্য সম্পদ আহরণ করা যায় সে উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাশিয়ান সরকারের দক্ষ জনবলসহ কারিগরী সহযোগিতায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালনাধীনে ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
গ। ১৯৮৩ সালে এ একাডেমি পরিচালনার দায়িত্ব নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনে চট্টগ্রামস্থ মেরিন একাডেমির অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮৬ সালে ইহাকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তথা মেরিন একাডেমি থেকে প্রত্যাহার করতঃ পুনরায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রাণাধীনে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮৮ সালে এ একাডেমির পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশান থেকে প্রত্যাহার করতঃ সরাসরি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০ জুন ১৯৯৩ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ একাডেমি পরিচালিত হয়।
ঘ। ০১ জুলাই ১৯৯৩ সাল থেকে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বাজেটভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী একাডেমির ‘অধ্যক্ষ’ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে এ একাডেমির যাবতীয় কার্যক্রম প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ৩২তম ব্যাচে একাডেমিতে পুরুষ ক্যাডেটের পাশাপশি ১ম বারের মত মহিলা ক্যাডেট ভর্তি কর হয় যারা ২০১৪ সালে গ্রাজুয়েশন লাভ করে। এযাবৎ ৪১তম ব্যাচ পর্যন্ত ৬০ জন মহিলা ক্যাডেট এ একাডেমি হতে উত্তীর্ণ হয়েছে, তন্মধ্যে ১৫জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ৪৫জন মেরিন ফিশারিজ।
৪। একাডেমির কর্মপরিধি। একাডেমির মূল কর্মপরিধি হলোঃ
ক। গভীর সমু্দ্রের মৎস্য আহরণকারী জাহাজ/ট্রলার ও নৌ বাণিজ্যিক জাহাজ চালানো, জাহাজের ইঞ্জিন অপারেশন, জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মাননিয়ন্ত্রণ শিল্প ইত্যাদি সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ার উদ্দেশ্যে প্রি-সী ট্রেনিংসহ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
খ। সমুদ্রে মৌলিক নিরাপত্তা বিষয়সহ অন্যান্য আবশ্যকীয় বিষয়ে নৌ-কর্মকর্তা ও নাবিকদের এনসিলিয়ারি ট্রেনিং প্রদান করা।
গ। সমুদ্রগামী মৎস্য আহরণকারী জাহাজ/ট্রলার এবং নৌ বাণিজ্যিক জাহাজ এ নিয়োজিত অফিসারদের সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সী পরীক্ষার প্রস্তুতির নিমিত্তে রিফ্রেশার্স কোর্স পরিচালনা করা ।
৫। একাডেমির প্রশিক্ষণ।
ক। প্রতিষ্ঠা লগ্নে Navigation, Marine Engineering, Fish Processing Technology, Trawl Operation, Radio Engineering, Refrigeration Engineering, Electrical Engineering. সর্বমোট ০৭টি বিভাগে ০১ বছর থেকে ২.৫ বছর মেয়াদী প্রী-সি ট্রেনিং পরিচালনা করা হতো। বিএফডিসি’র অধীনে জনাব মোহাম্মদ আব্দুল হাই একাডেমির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে একমাত্র অধ্যক্ষ ছাড়া একাডেমির প্রশিক্ষকবৃন্দ রাশিয়ান ছিলেন। তাদের মধ্যে Mr. V. Kasparovich চীফ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যিনি অত্যন্ত কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন। JOCV, DANIDA, JICA ইত্যাদি বিদেশী উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে রাশান, ড্যানিশ, জাপানি বিশেষজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ ৯০ এর দশক পর্যন্ত এ একাডেমিতে কাজ করেছেন। Mr. Alexanian তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশের প্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠান মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর কর্মকালীন সময়ে তিনি (১৯৭৩-১৯৭৬) একাডেমির ক্যাডেটগণকে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।
খ। ১৯৮৪ সনে নৌশিক্ষা ক্ষেত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং STCW 95 for sea fearers অনুসরণ করে বিভাগসমূহ পুন:বিন্যাস/ একত্রিত করে নটিক্যাল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন ফিশারিজ ৩টি বিভাগ/কোর্সে প্রশিঁক্ষন প্রদান করা হয়। ১৯৯৯ ও ২০০০ সনে একাডেমির ৩টি বিভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি লাভ করে। এ সময় হতে একাডেমিতে প্রিসি ট্রেনিং সনদ প্রদানের পাশাপাশি বিএসসি (পাস) নটিক্যাল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন ফিশারিজ ডিগ্রী প্রদান করা হয়।
গ। সম্প্রতিকালে একাডেমিকে বিশ্বমানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নীত করার লক্ষ্যে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি জোরদারকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। উক্ত প্রকল্পে একাডেমিক ভবন, দেশি-বিদেশি ক্যাডেট হোস্টেল, আবাসিক ভবন, সুইমিংপুল ও অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স ইত্যাদি অবকাঠামো সৃষ্টিসহ একাডেমির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিশ্বমানে এবং কারিকুলাম অনার্স পর্যায়ে উন্নীত করনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
ঘ। ২০১৮ সাল হতে এ একাডেমির নটিক্যাল স্টাডিজ ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে ০২ বছর মেয়াদী প্রি-সী ট্রেনিং কোর্স সম্পন্নকারী ক্যাডেটদের অনুকূলে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক Continuous Discharge Certificate (CDC) ইস্যু করা হচ্ছে। ফলে ক্যাডেটরা সরসরি বিদেশগামী বাণিজ্যিক জাহাজে চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাচ |
ডেক |
ইঞ্জিন |
মোট |
মন্তব্য |
২৫ তম |
১৮ জন |
২০ জন |
৩৮ জন |
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় হতে ৬ এপ্রিল ২০০৮ ইং তারিখ জারিকৃত পত্র মোতাবেক। |
২৬ তম |
১৫ জন |
২১ জন |
৩৬ জন |
|
২৭ তম |
১০ জন |
১০ জন |
২০ জন |
|
২৭ তম হতে ৩৫ তম |
- |
- |
৩২৯ জন |
বিশেষ ব্যবস্থায় ও বিধি শিথিলকরতঃ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় হতে ২৫ আগস্ট ২০১৯ ইং তারিখ জারিকৃত পত্র মোতাবেক। |
৩৬তম হতে ৪১তম |
১৮৮ জন |
১৮৯ জন |
৩৭৭ জন |
নৌ পরিবহন অধিদপ্তর হতে ২২ এপ্রিল ২০১৮ইং তারিখ জারিকৃত পত্র মোতাবেক। |
সর্বমোট |
৮০০ জন |
|
ঙ। আধুনিকায়ন ও কাঙ্ক্ষিত চাহিদা/শর্ত পুরণ করায় ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ হতে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি বিএসসি অনার্স ইন নটিক্যাল স্টাডিজ, বিএসসি ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিএসসি অনার্স ইন মেরিন ফিশারিজ কোর্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অধিভুক্তি লাভ করে । যা একাডেমিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করে এবং নি:সন্দেহে ইহা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বর্তমান একাডেমিতে ৪ বছর মেয়াদি উক্ত অনার্স কোর্সসমূহ পরিচালিত হচ্ছে। একাডেমিতে ০৪ বছর মেয়াদী বিএসসি অনার্স কোর্স চালু করার পরবর্তী ৩৯তম ব্যাচের মেরিন ফিশারিজ বিভাগের ১৪ জন ক্যাডেট ২০২২ সালে বিএসসি (অনার্স) কোর্স সম্পন্ন করেন।
৬। পাশকৃত ক্যাডেটদের পরিসংখ্যান। অত্র একাডেমি হতে এ যাবৎ ৬০জন মহিলা (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ১৫ জন ও মেরিন ফিশারিজ ৪৫জন) ক্যাডেটসহ সর্বমোট প্রায় ১৯৯৮ জন ক্যাডেট প্রি-সী ট্রেনিং সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে ১৯৯৯-২০০০ সন হতে স্নাতক কোর্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্তি লাভ করায় এ সময় হতে প্রিসি ট্রেনিং সনদ প্রদানের পাশাপাশি বিএসসি (পাস) নটিক্যাল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন ফিশারিজ ডিগ্রী প্রদান করা হয়। সর্বশেষ একাডেমির ৪১তম ব্যাচের মুজিববর্ষের পাসিং আউট প্যারেড-২০২১ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৮৪জন (০২ জন মহিলা) ক্যাডেট প্রি-সী ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। উক্ত মুজিববর্ষের পাসিং আউট প্যারেড-২০২১ এ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন।
৭। একাডেমির বর্তমান ক্যাডেট সংখ্যা।
ব্যাচ |
প্রশিক্ষণ কোর্সের শিরোনাম |
মোট |
|||||
বিএসসি (অনার্স) ইন নটিক্যাল স্টাডিজ |
বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং |
বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ |
|||||
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
||
৪১তম (৪র্থ বর্ষ/১ম সেমিস্টার) |
০০ |
০০ |
০০ |
০০ |
১৬ |
০২ |
১৮ |
৪২তম (২য় বর্ষ/১ম সেমিস্টার) |
৬০ |
০০ |
৫৬ |
০৪ |
১৮ |
০১ |
১৩৯ |
৪৩তম (১ম বর্ষ/১ম সেমিস্টার) |
৩৬ |
০৪ |
৩৪ |
০৫ |
২৬ |
০৪ |
১০৯ |
মোট |
৯৬ |
০৪ |
৯০ |
০৯ |
১৫০ |
০৭ |
২৬৬ |
৮। পাশকৃত ক্যাডেটদের পরিসংখ্যান:
(১) প্রি-সী সনদ প্রাপ্ত ক্যাডেটদের পরিসংখ্যানঃ
ব্যাচ |
কোর্স এর নাম |
নটিক্যাল |
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং |
মেরিন ফিশারিজ |
মোট |
|||
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
|
||
১-১৮তম |
নন বিএসসি |
২৩২ |
- |
৩১৩ |
- |
১০২ |
- |
৬৪৭ |
১৯-২৩তম |
বিএসসি (০২ বছর) |
৬৯ |
- |
১০৪ |
- |
৪৫ |
- |
২১৮ |
২৪-৩৮তম |
বিএসসি (০৩ বছর) |
৩৪৫ |
- |
৩৫২ |
৯ |
১৩৯ |
৩৯ |
৮৮৪ |
৩৯-৪১তম |
বিএসসি (অনার্স) |
৯৬ |
- |
৯১ |
৬ |
৫০ |
৬ |
২৪৯ |
সর্বমোট |
৭৪২ |
- |
৮৬০ |
১৫ |
৩৩৬ |
৪৫ |
১৯৯৮ |
|
৭৪২ |
৮৭৫ |
৩৮১ |
(২) বিএসসি অনার্স কোর্স সনদ প্রাপ্ত ক্যাডেটদের পরিসংখ্যানঃ
ব্যাচ |
কোর্স এর নাম |
নটিক্যাল |
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং |
মেরিন ফিশারিজ |
মোট |
|||
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
পুরুষ |
মহিলা |
|
||
৩৯তম |
বিএসসি (অনার্স) (৩১/০৮/২০২২) |
০০ |
০০ |
০০ |
০০ |
১৪ |
০০ |
১৪ |
সর্বমোট |
০০ |
০০ |
০০ |
০০ |
১৪ |
০০ |
১৪ |
৯। জাতীয় অর্থনীতিতে একাডেমির ভূমিকা। একাডেমি হতে পাশকৃত ১৯৯৮ জন ক্যাডেটের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১১০০ জনের অধিক ক্যাডেট বর্হিবিশ্বে বাণিজ্যিক জাহাজসমূহে কর্মরত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যা বার্ষিক প্রায় ৪০.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (হিসাব প্রায় ৪৮০০০ মার্কিন ডলার/ক্যাডেট/বছর)। এছাড়ও মেরিন ফিশারিজ বিভাগ হতে পাশকৃত ক্যাডেটরা দেশীয় ফিশিং ট্রলার, ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার হিসেবে যোগদান করে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিতকে সমৃদ্ধশালী করতেছে।
১০। একাডেমির ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা। একাডেমির প্রশিক্ষণ সুবিধা যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে “সিমুলেটর বেইজড ট্রেনিং ফেসিলিটিজ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সুবিধা স্থাপন” শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে যা বর্তমানে সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত আছে। বর্তমানে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় ৫টি অত্যাধুনিক ট্রেনিং সিমুলেটর (১টি ব্রিজ সিমুলেটর, ১টি মেইন ইঞ্জিন সিমুলেটর, ১টি ফিশ ফাইন্ডিং সিমুলেটর, ১টি ফায়ার ফাইটিং এন্ড ডেমেজ কন্ট্রোল সিমুলেটর এবং ১টি ফিশ প্রসেসিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিমুলেটর), একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ড সংস্করণ ও বর্ধিতকরণ, গ্যালারি, কোয়ার্টার ডেক, ক্যাডেটের আবাসন সুবিধা উন্নতকরণ এবং একাডেমির ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নকরণ।
১১। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বৈদেশিক ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ। ক্যাডেটদের বাণিজ্যিক জাহাজে চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বহিঃ বিশ্বে গমণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের স্ব-উদ্যোগে ক্যাডেটদের বৈদেশিক ভাষা শিক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান সরকারের সময়ে একাডেমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফরাসি ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে একাডেমিতে প্রতিষ্ঠিত ‘এডভান্সড ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট উইথ ডিজিটাল ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব সিস্টেম’টি বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার image স্বরূপ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
১২। ক্যাডেটদের চাকুরির সুবিধা বৃদ্ধি। এ সময়ে একাডেমির প্রশিক্ষণ ও সনদের মান উন্নয়নের ফলে একাডেমি হতে পাশকৃত ক্যাডেটগণ দেশী-বিদেশি সমুদ্রগামী মৎস্য ট্রলার ও বাণিজ্যিক জাহাজসহ বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরীর ব্যাপক সুযোগ পেয়েছে। সম্প্রতিকালে দেশ বিদেশের সমুদ্রগামী মৎস্য ট্রলার ও বাণিজ্যিক জাহাজে নেভিগেটর ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, শিপইয়ার্ড, শিপ বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠান ও ড্রাইডকের ইঞ্জিনিয়ার, মৎস্য ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার হিসেবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যোগদান করছে। এছড়াও একাডেমি হতে পাশকৃত ক্যাডেটগণ Inter Services Selection Board (ISSB) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরাসরি নৌ বাহিনীতে অফিসার পদে যোগদান করতে পারছে।
১৩। বর্তমান সরকারের ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতিতে একাডেমির অবদান। ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি হল টেকসই পদ্ধতিতে সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার করার একটি নতুন ধারণা। বাংলাদেশ একটি সমুদ্র উপকূলীয় দেশ। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল লাইন এবং ১,১৮,৮১৩ বর্গ.কি. এরও বেশি একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা আচ্ছাদিত সুনীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের টেকসই অনুশীলনের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ ও টেকসই ব্যবহারের সাথে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মেরিন ফিশারিজ একাডেমি একমাত্র জাতীয় পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, যেখানে সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দক্ষ জনশক্তি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা নিরীক্ষায় সমুদ্র তলদেশকে কাজে লাগিয়ে মেরিকালচার প্রযুক্তির সম্প্রসারণকরণ এবং সমুদ্র তলদেশ হতে হাইড্রো-কার্বন সম্পদ ছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ নডিউল ও অন্যান্য মূল্যবান সমুদ্র সম্পদ আহরণের কৌশল উপর একাডেমিক গবেষণা পরিচালনা করা হবে।
১৪। উপসংহার। মেরিন ফিশারিজ একাডেমি-সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ এবং নৌ-বাণিজ্যিক সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম পেশাভিত্তিক মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ একাডেমি হতে উত্তীর্ণ ক্যাডেটগণ একদিকে গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং জাহাজ/ ট্রেলার, জাহাজ নির্মাণকারী/ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ইত্যাদি সেক্টরে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং আপামর জনসাধারণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অন্যদিকে ক্যাডেটগ দক্ষতার সাথে ফিশিং জাহাজ/ট্রেলার, নৌ-বাণিজ্যিক জাহাজ, জাহাজ নির্মাণকারী/মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান, মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ইত্যাদি সেক্টরে বিদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করে জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ।
---- ˟-------